সকলকে জানায় ডেইলি নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর পক্ষ থেকে স্বাগতম। আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন।
আজ আপনারা জানতে পারবেন বাংলাদেশে কি কি লিচুর জাত রয়েছে। কোন জাতের লিচুর উৎপাদন করলে ব্যবসায়ীক ভাবে লাভবান হতে পারবেন সহজেই। তাছারাও আরো জানতে পারবেন লিচুর পুষ্টিগুন কি। লিচু আমাদের শরীরের কি উপাকার করে এবং কি কি ক্ষতি করে থাকে। এ সকল বিষয় ছাড়াও লিচু সকল খুটিনাটি বিষয় নিয়ে ক্লিয়ার ধারনা দেওয়া হবে।
তাই এ সকল বিষয় জানতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে সম্পূর্ণ আরটিকেলটি পড়তে হবে। তাহলে চলুন চলে যায় বিস্তারিত আলোচনায়।
বাংলাদেশের বিখ্যাত লিচুর জাত
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি উন্নত জাতের লিচু পাওয়া যায়। এগুলো হলোঃ
- বোম্বাই লিচু
- গোলাপি লিচু
- চায়না ৩ লিচু
- বারি ১ লিচু
- মোজাফফরপুরী লিচু
বাংলাদেশের মধ্যে এগুলোই হলো সবথেকে বেশি উন্নত ও বিখ্যাত জাতের লিচু। সকলেই এই জাতের লিচু খেতে ভালোবাসে।
সাধারণত লিচুর মৌসুম হলো মধ্য মে মাস থেকে মধ্য জুন মাস পর্যন্ত৷ অর্থাৎ লিচুর সিজিন চলে গোটা বছরের মধ্যে মাত্র ১ মাস। এই ১ মাসেই পাওয়া যায় হরেক রকমের বহুরূপী লিচু।
বাংলাদেশের কোন কোন জেলায় অধিক পরিমানে লিচু উৎপন্ন হয়।
বাংলাদেশের সব জেলা কোন না কোন দিক দিয়ে বিখ্যাত। তেমনি লিচু উৎপাদনেও রয়েছে বেশ কয়েকটি জেলা বিখ্যাত রয়েছে। এই জেলা গুলোতে বাংলাদেশের সেরা লিচু পাওয়া যায়।তাই এই জেলা গুলোর লিচুর চাহিদাও তাই অনেক বেশি।
বাংলাদেশের মধ্যে লিচু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত জেলা গুলো হল, দিনাজপুর, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও। এই সকল জেলা গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন জেলাতে লিচু ফল হয়ে থাকে।
সারা বাংলাদেশের মধ্যে দিনাজপুরের লিচুই বেশি বিখ্যাত। এই জেলাতে ফলন ও অধিক হয়।
লিচুর জন্য উপযোগী মাটি
সব যায়গায় যেমন সব কিছু উৎপাদন হয় না। ঠিক তেমনি যেকোনো যায়গায় লিচু গাছ লাগালে লিচু হয় না।
লিচুর আবাদ করা হয় দীর্ঘ মেয়াদি সময় নিয়ে। সঠিক যায়গায় গাছ লাগালে ফলন ও পাওয়া যায় বাম্পার। গাছ ও বৃদ্ধি পায় খুব দ্রুত। তাই যখন লিচুর গাছ লাগাবো অথবা বাগান লাগাবো তখন অবশ্যই মাটি বিবেচনা করে লাগাতে হবে। তা না হলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না। তাহলে এখন মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো কোন জমিতে লিচু গাছ লাগাবো। বা লিচুর জন্য উপযোগী মাটি কোন গুলো।
লিচু গাছের জন্য প্রধানত জৈব পদার্থ যুক্ত মাটি, নিকাশযুক্ত বেলে দোআশঁ মাটি। যে সকল স্থানে পানি কম জমে থাকে, সে গুলোই হলো লিচুর জন্য উপযোগী মাটি।
এই ধরনের মাটিতে লিচু গাছ লাগাতে হবে। তাহলে আশাকরা যায় ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

লিচুর উপকারিতা সমূহ
বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত একটি ফল হলো লিচু। গ্রীষ্মকালের মে-জুন মাসে পাওয়া এই রসালো ফলটি। ছোট বড় সকলেই পছন্দের একটি ফল হলো লিচু।
এই ফলটি দেখতে যেমনি রসালো ও সুন্দর। ঠিক তেমনি এর রয়েছে নানান ধরনের উপকারিতা। যা আমাদের শরীরে নানান ভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এখন জেনে নিন লিচুর উপকারিতা গুলো।
- শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- লিচুতে পাওয়া যায় ভিটামিন,খনিজ পদার্থ, এন্টি অক্সিজেন, কপার,পটাসিয়াম ও আরো নানান ধরনের উপাদান।
- লিচুতে রয়েছে প্রচুঁর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা শরীরের ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে।
- শরীরের ক্ষত দূর করতে সহায়তা করে।
- বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হূদরোগ ক্যান্সার এ সব থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে।
- লিচু শরীরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
এ সকল বিষয় ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের উপকারে লিচু কাজ করে থাকে। তাই সকলের উচিত লিচুর সিজন এ কম বেশি হোক লিচু খাওয়া। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
লিচুর অপকারিতা সমূহ
আমরা উপরে জানতে পারলাম লিচুর উপকারিতা সম্পর্কে। এখন জানবো লিচুর অপকারিতা সম্পর্কে।
লিচু খেলে আমাদের যেমন নানান ধরনের উপকার হয় ঠিক তেমনি মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ার ফলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়।অতিরিক্ত লিচু খাওয়ার ফলে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে চলুন জেনে নেয়।
- অধিক পরিমানে লিচু খাওয়ার ফলে শরীরে রক্তচাপ এর পরিমাণ কমে যেতে পারে। আর রক্ত চাপের পরিমাণ কমে গেলে দেখা দিতে পারেন নানান ধরনের অসুবিধা। যেমন শ্বাসকষ্ট হতে পারে, বুক জ্বালা পোড়া, বুক খুবই ব্যাথা করা, মাথা ঘোরা সহ আরো নানান ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- খালি পেটে লিচু খেলে তা, পেটের মধ্যে বদ হজম হয়।যে কারনে ডায়রিয়া,পেটের ব্যাথা,সহ আরো নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
- লিচু শরীরে গ্লুকোজ এর পরিমান কমিয়ে থাকে। তাই যাদের ডায়েবেটিস রয়েছে তাদের পরিমাণ মত খেতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস এর ওপর নানান ধরনের প্রভাব পড়বে।
- অতিরিক্ত লিচু খেলে শরীরের ত্বক যেমন উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়, ঠিক তেমনি অতিরিক্ত পরিমানে লিচু খেলে তা চোখ ও মুখ শুকিয়ে যেতে সাহায্য করে৷ অর্থাৎ চেহারা পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। তাই বেশি পরিমাণে লিচু খাওয়া উচিত নয়।
- অতিরিক্ত লিচু শরীরের ভিটামিন এর সাম্যতাকে বা ব্যালেন্স করে নষ্ট করে দেয়। একদিকে লিচু যেমন আপনার উপকার করে ঠিক তেমনি অপর পাশে আপনার ক্ষতিও করে।
লিচু চাষে লাভবান জাত
অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা সারা বছর কোনো কাজ করে না। শুধু মাত্র লিচুর আবাদ করে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করে নিচ্ছে৷ তারা বিভিন্ন জাতের লিচু উৎপন্ন করছে, সাথে বিভিন্ন দামে বাজারে বিক্রি করছে।
যারা লিচুর ব্যবসা করেন, তারা ভালো ভাবেই লিচুর জাত সম্পর্কে ধারণা রাখেন। কোন জাতের লিচু ভালো ও কখন কি পরিমাণে পরিচর্যা করতে হবে সব বিষয় এ বিস্তর ধারনা রাখেন।
বর্তমান সময়ে প্রতি ১০০ লিচু কমপক্ষে ৩০০/৩৫০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে৷ তাই আপনিও যদি লিচুর ব্যবসা করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে লিচুর জাত সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে৷ তাহলে আসুন জেনে নিয় কোন জাতে কেমন ইনকাম।
লিচুর সিজনে সর্বপ্রথমে বাজারে আসে গোলাপি লিচু৷ এই লিচু সবার আগেই পেকে যায়। ফলে আগাম অধিক দামে বিক্রি করতে পারবেন। তার পর ক্রমান্বয়ে সব লিচু বাজারে আসতে থাকে। ফলে বাজারে একটি প্রতিদন্দিতা শুরু হয়ে যায়। আপনার ফল যত ভালো হয়, ঠিক সেই পরিমান দাম পেয়ে যাবেন।
লিচুর জাত হিসেবে আপনারা বোম্বাই লিচু ও চায়না ৩ লিচুর লাগাতে পারেন৷ এই লিচুর চাহিদা বাজারে অনেক বেশি।
তাই লিচু নিয়ে কাজ করতে চাইলে এই জাত গুলো নিয়েই করবেন। তাহলে আপনারা বাজারে টিকে থাকতে পারবেন।
শেষ কথা
লিচু একটি সিজনের ফল, তাই এই সময়ে পরিমান মত লিচু খাওয়াই সকলের উচিত। খুব ভালো লাগে বলে বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেললে, দেখবেন নানা ধরনের সমস্যার সসম্মুখীন হয়েছেন, যা আমরা উপরে আলোচনা করে এসেছি। আজ এ পর্যন্তই।
আশাকরি আমাদের এই আরটিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি এই আরটিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন।
আরো এমন নতুন নতুন আরটিকেল পড়তে চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।